Artwork: Jack Forbes
শিল্পকর্মঃ জ্যাক ফোর্বস

গণবিক্ষোভ ও প্রতিবাদে নিরাপদ সাংবাদিকতা: সাংবাদিকদের জন্য শারীরিক ও ডিজিটাল নিরাপত্তার গাইড

সর্বশেষ আপডেটঃ ২০ জুলাই, ২০২১ (Last Updated: July 20, 2021) 

উত্তেজিত জনতার বিক্ষোভ ও সহিংসতা চলমান অবস্থায় আক্রান্ত জায়গাগুলোতে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা কাভার করতে গিয়ে প্রতি বছর অনেক সাংবাদিক আহত হন। কেউ কেউ প্রাণ হারান। 

এই নিরাপত্তা নির্দেশিকার পরামর্শগুলো মেনে চললে গণমাধ্যম কর্মীরা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারবেন। 

অ্যাসাইনমেন্টের প্রস্তুতি

  • আগে থেকেই খোঁজ নিন কারা উপস্থিত থাকবে। কোনো উগ্রপন্থী দল বা গোষ্ঠী, অন্য দলের কোনো পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আছে কী না জেনে নিন। দুষ্কৃতিকারীর সশস্ত্র উপস্থিতির সম্ভাবনা থাকলে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। গণমাধ্যমের প্রতি তাদের মনোভাব কেমন, আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সেটির প্রতি কোনো বিশেষ ক্ষোভ আছে কী না সেটাও বিবেচনায় নিন। দাঙ্গা পুলিশের উপস্থিতি ও অবস্থান কখন, কোথায় হতে পারে সেটাও জেনে রাখুন।
  • সমাবেশ স্থানটির অবস্থান মনোযোগ দিয়ে বার বার বিশ্লেষণ করুন। যেসব জায়গায় সংঘর্ষ হতে পারে এবং জরুরি অবস্থায় কোন পথে নিরাপদে বের হয়ে যাওয়া যাবে তা মাথায় ভালোভাবে টুকে রাখুন।
  • অবস্থা বেগতিক হলে আগেই ঠিক করে রাখুন কী করবেন এবং কোথায় যাবেন।
  • এরকম পরিস্থিতে সন্ধ্যার পরে, অন্ধকার অবস্থায় কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সম্ভব হলে অন্ধকার ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
  • যদি রাতভর এরকম ঘটনা কাভার করতে হয়, তাহলে গণ্ডগোল থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকবার মতো জায়গা নির্বাচন করুন।
  • নিকটবর্তী হাসপাতাল বা জরুরি বিভাগ আছে এমন ক্লিনিক কোথায় আছে আগে থেকেই চিহ্নিত করে রাখুন। আঘাত পেলে যেন কোন সময় নষ্ট করা ছাড়াই দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া যায়।  
  • অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার আগে প্রস্তুতির ব্যাপারে আরও বিস্তারে জানতে  CPJ-এর অ্যাসাইনমেন্ট পরিকল্পনা সংক্রান্ত পরামর্শগুলো পড়ে দেখুন। 

স্টাফদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা

  • রিপোর্টারের অতীতের কোনো ঘটনা, তার ধর্ম, গোত্র বা লিঙ্গপরিচয় তাকে সেখানে বিপদে ফেলতে পারে কী না তা ভেবে দেখুন।  
  • মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন, তাদের শারীরিক ফিটনেসের প্রতি নজর থাকা জরুরি। এতে যেকোনো অতর্কিত বিপদে দ্রুত এবং নিরাপদে সরে যাওয়া যায়।
  • ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় একা কাজ কাজ করা ঠিক নয়। সবসময় অন্য সহকর্মীদের কাছাকাছি থেকে কাজ করার চেষ্টা করুন। জরুরি অবস্থায় কোথায় একত্র হবেন তা আগে থেকে ঠিক করে নিন। একান্তই একা কাজ করতে হলে একা রিপোর্টিংয়ের সময় CPJ-এর শারীরিক নিরাপত্তার টিপস পড়ে দেখুন।

    অফিস ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ
  • আপনার অফিস, পরিবার বা বন্ধুদেরকে নিয়মিতভাবে আপডেট জানানোর একটা প্ল্যান বানাতে হবে। তাদেরকে জানিয়ে রাখুন কতক্ষণ পর পর আপনি আপনার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট দেবেন। টানা অনেকক্ষণ আপনার কোনো খোঁজ না পেলে তাদের করণীয় জানিয়ে রাখুন।    
  • আপনি আঘাত পেলে, বা গ্রেপ্তার হলে কী করবেন তা আগে থেকে ঠিক করে রাখা জরুরি। বিশেষ প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কারও ফোন নাম্বার সবসময় সঙ্গে রাখুন, সেটা হতে পারে আপনার কলিগ, বা বন্ধু। যদি পুলিশের হাতে আটক বা গ্রেপ্তার হন, সেক্ষেত্রে একজন পরিচিত আইনজীবীর নাম্বারও রাখুন। 

    আটক বা গ্রেপ্তার হলে কী কী করতে হবে সেই ব্যাপারে আরও তথ্যের জন্য CPJ-এর গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কিত নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেখুন।
  •  আপনার চারপাশে কী ঘটছে এবং কোনো নতুন ঝুঁকি আসছে কী না সে ব্যাপারে নজর রাখতে সঙ্গে কাউকে রাখার কথাও ভাবতে পারেন। এটা হতে পারে আপনার অন্য কোনো সহকর্মী। 


পোশাক ও সরঞ্জাম

  • দ্রুত ও স্বচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন এমন পোশাক ও জুতোর ব্যবহার করুন।
  • টেনে ধরা যায় এমন কিছু পরবেন না। যেমন গলায় মালা, স্কার্ফ, আইডি কার্ড ঝোলানোর ফিতা কিংবা  পনিটেইল। সহজে আগুন লাগতে পারে এমন উপকরণে বানানো পোশাক এড়িয়ে চলুন। 
  • সহিংসতার আশঙ্কা থাকলে সুরক্ষামূলক চশমা বা গগলস, টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচার মাস্ক এবং হেলমেট ব্যবহার করার কথা ভাবুন। গোলাগুলির আশঙ্কা থাকলে বুলেটপ্রুফ বডি ভেস্ট এবং হেলমেট পরুন। আরও তথ্যের জন্য CPJ-এর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (PPE) গাইড দেখুন।
  • বের হওয়ার আগে মোবাইলের ব্যাটারি ফুল চার্জ করে নিন। সঙ্গে একটি পোর্টেবল চার্জার/ পাওয়ার ব্যাংক রাখুন।
  • কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী সবসময় সঙ্গে রাখুন। পানি, স্যালাইনের প্যাকেট, এনার্জি বার আপনাকে চাঙ্গা ও সতেজ রাখবে। একটি ফার্স্ট এইড কীট-ও কাজে লাগতে পারে। 
  • সঙ্গে দামি ও মূল্যবান জিনিসপত্র রাখবেন না।

পরিবহন ব্যবস্থার পরিকল্পনা ও ব্যাকআপ 

  • যাতায়ের পরিকল্পনা, রুট ম্যাপিং আগেই করে নিন। সময়সূচির ব্যাপারে ফ্লেক্সিবল থাকা ভালো। মনে রাখবেন, রাস্তা বন্ধ বা অবরোধের কারণে আগের পরিকল্পনা বিঘ্নিত হতে পারে। ব্যাকআপ প্ল্যান রেডি রাখুন।
  • গাড়ি সবসময় নিরাপদ স্থানে ও দূরত্বে পার্ক করুন। জরুরি অবস্থায় যেই দিকে যেতে হবে, গাড়ি সেইমুখো করে রাখলে ভালো হয়। জরুরি অবস্থায় নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করতে না পারলে বিকল্প কী হতে পারে সেটাও ভেবে রাখুন।
  • মূল্যবান রিপোর্টিং ইকুইপমেন্ট, যেমন ক্যামেরা, ল্যাপটপ, গাড়িতে ফেলে রাখবেন না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর চুরি বা ডাকাতির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়ে পূর্ব-সতর্কতা

  • সব সময় নিরাপদ আশ্রয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। নিরাপদ থাকা যাবে এমন কোনো উঁচু জায়গা খুঁজে বের করুন। যেমন ব্যালকনি বা ছাদ। 
  • দৃঢ়/ মজবুত কোনো আশ্রয়ের কাছাকাছি অবস্থান নেবেন। যেমন কোনো বিল্ডিং বা ছাদ আছে এমন ভবন। কিন্তু সামনের অংশ কাঁচযুক্ত এমন ভবন থেকে দূরত্ব বজায় রাখবেন।
  • সমাবেশস্থল উত্তপ্ত ও মারমুখী হয়ে উঠলে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য একাধিক পথ চিহ্নিত করে রাখুন। আগেই জায়গাটার ম্যাপ খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এবং লোকেশনে পৌঁছানোর পর আগে থেকে ঠিক করে রাখা পালানোর পথগুলো আবার রিভিউ করুন। যেকোনো অনাকাংখিত পরিস্থিতিতে আগের নির্ধারিত প্ল্যান অ্যাডজাস্ট করতে হতে পারে, তাই লোকেশনে পৌঁছে চারপাশ বার বার ভালোমতো দেখে নিতে হবে। 
  • মনে রাখবেন এরকম গণজমায়েত, বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ সমাবেশ কাভার করতে যাওয়ার আগে পূর্ব-পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করলে গণ্ডগোল চেষ্টা করবেন ভীড়ের কেন্দ্রস্থলে না যেতে কারণ এরকম অবস্থান থেকে নিরাপদে বের হওয়া কঠিন।

নিজের চারপাশ নিয়ে সচেতনতা

  •  ছবি তোলার সময় সর্বদা সতর্ক থাকবেন, বিশেষ করে যখন আপনার অবস্থান উগ্রবাদী গোষ্ঠী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং সেনসিটিভ রাষ্ট্রীয় এলাকা বা সামরিক অবকাঠামোর আশেপাশে।
  • লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কারণে ভাঙা ধ্বংসাবশেষ, কাচের টুকরো ও আগুন থেকে সাবধান থাকুন।
  • অকারণ বাড়তি মনোযোগ আকর্ষিত হয় এমন কোনো কাজ করা থেকেবিরত থাকবেন। বিক্ষোভের ভীড়ের মধ্যে প্রবেশ করার আগে গণমাধ্যমের প্রতি তাদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করুন।
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লে পদদলিত হয়ে আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। 
  • সারাক্ষণ কর্তৃপক্ষের মেজাজ ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন। তারা যদি সুসজ্জিত দাঙ্গা পুলিশ রাস্তায় নামায়, বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে ইট-পাথর বা টিয়ার গ্যাস কিংবা সাইন্ড গ্রেনেড  ইত্যাদি ছোঁড়ে —এর মানে হতে পারে যে এরও আক্রমণ আসছে। যখনই মনে হবে যে ইঙ্গিত সুবিধার না,  দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যান।

টিয়ার গ্যাস ব্যবহৃত হলে যা যা করণীয়:

  • ব্যক্তিগত সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পরে থাকুন; যেমন টিয়ার গ্যাস-মাস্ক, চোখের সুরক্ষার জন্য ধোঁয়ারোধী চশমা, এবং হেলমেট।
  • চোখে কন্টাক্ট লেন্স না পরাই ভালো। প্রয়োজনে চশমা পরুন। 
  • ত্বকে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। যেমন মেকআপ বা ময়েশ্চারাইজার। বিশেষ করে কোনো তেল বা তেল-ভিত্তিক পণ্য এড়িয়ে চলুন।
  • অ্যাজমা অথবা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের টিয়ার গ্যাস ব্যবহৃত এলাকা এড়িয়ে চলা উচিত।
  • টিয়ার গ্যাসের কারণে পালানোর সময় অনেক সময় গ্যাসের প্রভাবে চোখে ভালোমতো দেখতে অসুবিধা হতে পারে। একারণে ওই এলাকা থেকে বের হতে সাহায্য করতে পারে এমন ল্যান্ডমার্কগুলো নজরে রাখুন। যেমন দোকানের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড,  ফুটপাতের ধাপ, রেলিং ইত্যাদি।
  • যদি টিয়ার গ্যাসের সংস্পর্শে আসেন, তাহলে উঁচু জায়গায় উঠে খোলা বাতাসে দাঁড়ান। এতে বাতাস গ্যাসকে দূরে সরিয়ে নেবে। চোখ বা মুখ ঘষবেন না। সুযোগ পেলে ঠান্ডা পানিতে শাওয়ার ছেড়ে গোসল করে নিন, যাতে ত্বক থেকে গ্যাস ধুয়ে যায়। পোশাক থেকে গ্যাসের কণাগুলো পুরোপুরি সরাতে পোশাকটি কয়েকবার ধুতে হবে, অথবা ফেলেও দিতে হতে পারে।

যেকোনো হামলার মোকাবেলা:

  • অন্যদের বডি ল্যাংগুয়েজ/ শরীরী ভাষা খেয়াল করুন। নিজের আচরণ এবং শরীরী ভাষা-ও এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যায়। এমন কোনো ইঙ্গিত প্রকাশ করবেন না যেতে অন্যরা উত্তেজিত হতে পারে।
  • কেউ আগ্রাসী বা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলে তার সঙ্গে নম্র ও শান্ত স্বরে চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। আপনার হাত দুটোকে দৃশ্যমান এবং হাতের তালু সামনের দিকে রেখে খোলা রাখুন। এই ভঙ্গি আক্রমণকারীর প্রতি একটি শান্তিপূর্ণ ও হুমকিহীন ইংগিত দেয়। এই শরীরের ভাষা ব্যবহার করে আপনি দেখাতে পারেন যে আপনি সহযোগিতাপূর্ণ এবং উত্তেজনা কমাতে চান। এটি আক্রমণকারীর আক্রমণাত্মক মনোভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  • যেকোনো ভয়ভীতির হুমকি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। যদি কেউ আপনাকে হঠাত করে ধরে ফেলে, পিছিয়ে যান এবং নিজেকে ছাড়িয়ে নিন, তবে আক্রমণাত্মক হবেন না। যদি বিপদে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তবে চিৎকার করুন।
  • যদি পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও খারাপ হয়, মাথা বাঁচানোর জন্য একটি হাত মুক্ত রাখুন। ছোট ছোট, নিয়ন্ত্রিতভাবে পা ফেলে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করুন যেন নিচে পরে না যান। যদি আপনার অন্য সহকর্মীরাও এক সঙ্গে থাকেন তাহলে সবাই পাশাপাশি থাকুন, পরস্পরকে সহায়তা করুন এবং একে অপরের হাত জোড়া বেঁধে এক সঙ্গে মুভ করুন।
  • আশপাশের পরিস্থিতি এবং নিজের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। হামলা, আক্রমণের ঘটনা কখনও কখনও সংবাদমূল্য বহন করে এবং মিডিয়ার জন্য তা ডকুমেন্ট করা গুরুত্বপূর্ণ । তবে হামলাকারীদের ছবি তুলতে গেলে অনেক সময় সাংবাদিকদের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। 

ডিজিটাল ও ডিভাইস সম্পর্কিত নিরাপত্তা:

জনবিশৃংখলা বিষয়ক কোনো প্রতিবেদন করার সময় আপনার ডিভাইসগুলো ভেঙে যাওয়া, চুরি ও বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। ঝুঁকি কমাতে নিচের নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শগুলো বিবেচনা করুন:

  • অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার আগে ডিভাইসগুলোর ব্যাকাপ নিয়ে রাখুন। আপনার সঙ্গের মোবাইলটার কনটেন্টগুলোর-ও ব্যাকআপ একটা নিরাপদ জায়গায় কপি করে রাখুন। 
  •  আগে থেকেই ডিজিটাল ডিভাইসগুলোতে রিমোট ওয়াইপ বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিভাইসের কনটেন্ট মুছে ফেলা যায় এমন  প্রযুক্তি সেট আপ করে নিন। এতে আপনার ডিভাইস চুরি হলে বা কেউ জোর করে বাজেয়াপ্ত করলে আপনি নিরাপদে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেই ডিভাইসগুলোর তথ্য মুছে ফেলতে পারবেন। তবে ডিভাইসটি ইন্টারনেট বা মোবাইল ডেটা সংযোগে থাকতে হবে।
  • আপনার ডিভাইসে কোন ধরণের তথ্য আছে এবং কোথায় সংরক্ষিত রয়েছে তার একটা ভালো ধারণা  রাখুন। যেসব তথ্য বা কনটেন্ট আপনি অন্যদের দেখতে দিতে চান না, সেগুলো মুছে ফেলুন। এর মধ্যে কাজের ডকুমেন্ট বা পরিবারের ছবিও থাকতে পারে। আপনার কাছে অতিরিক্ত ফোন থাকলে সেটি এধরণের কাভারেজের সময় নিয়ে যেতে পারেন এবং ব্যক্তিগত ফোনটি রেখে যান।
  • মেসেজিং অ্যাপে কী কী কনটেন্ট আছে তা দেখুন। যেসব মেসেজ, ডকুমেন্ট বা ছবি আপনি অন্যদের পড়তে দিতে চান না, সেগুলো মুছে ফেলুন। Signal বা WhatsApp এর মতো এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করুন। এই অ্যাপগুলো ব্যবহারের জন্য টু-ফ্যাক্টর অথিনটিকেশন ব্যবস্থা সেট আপ করুন এবং মেসেজ ডিজএপিয়ারিং মোড চালু করুন। অ্যাপগুলির সেটিংস থেকে এমন সেট আপ করতে পারবেন।
  • আপনার কনটাক্ট লিস্ট রিভিউ করুন এবং সেনসিটিভ কারও নাম-নাম্বার থাকলে তা মুছে দিন। এগুলো আপনি পরে আবার সহজেই খুঁজে পাবেন। কারণ এই তথ্যগুলো অটোম্যাটিক আপনার ফোনের সঙ্গে সেট করা ইমেইলের ক্লাউড ড্রাইভে এবং ক্ষেত্রবিশেষে সিম কার্ডের মেমরির ব্যাক-আপে থাকে।
  • স্টোরি করার সময় যে অ্যাপস ও সার্ভিসগুলোর কোনো প্রয়োজন হবে না সেগুলো থেকে লগ আউট করে ফেলুন, ডিলিট-ও করে দিতে পারেন। এতে করে কেউ যদি আপনার ডিভাইসে অ্যাক্সেস পায় তবে সেই অ্যাকাউন্টগুলো কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকবে।
  • ফোন লক ও আনলক করার নিরাপদ উপায় বেছে নিন। রিপোর্টিংয়ের সময় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি (আঙুলের ছাপ বা ফেস আইডি) দিয়ে ফোন আনলক করা সহজ। তবে এই পদ্ধতির একটি সমস্যা আছে। কেউ যদি আপনাকে আটক করে, তারা জোরপূর্বক আপনার আঙুল ফোনে ধরে আনলক করতে পারে। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একটি দীর্ঘ পিন কোড ব্যবহার করা।
  • বিক্ষোভ ও সহিংসতার সময় রিপোর্ট করার সময় ছবি, ভিডিও বা নোটসের নিয়মিত ব্যাকআপ নেওয়া জরুরি। বিভিন্ন ক্লাউড সার্ভিস, যেমন আইক্লাউড, ড্রপবক্স বা গুগল ড্রাইভে আপনার কনটেন্টগুলো নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন। মেসেজিং অ্যাপ বা ইমেইলের মাধ্যমেও এটি করতে পারেন। এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ বা মেমরি কার্ডও ব্যবহার করতে পারেন। এতে কেউ আপনার ডিভাইস ভেঙে ফেললে বা নিয়ে গেলেও তথ্য হারানোর ঝুঁকি কমবে।
  • আপনি যদি লাইভ স্ট্রিমিং করেন, তাহলে মাথায় রাখবেন আপনার অবস্থান অনেকেই দেখছে, জানছে। কেউ আপনাকে টার্গেট করতে চাইলে তখন খুব সহজেই আপনার অবস্থান সনাক্ত করতে পারবে। তাই এ ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
  • কমিউনিকেশন ব্ল্যাক আউট হলে, অর্থাৎ যদি ফোন সার্ভিস এবং ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে অন্যদের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করবেন তার জন্য একটি ব্যাকআপ প্ল্যান সবসময় তৈরি রাখুন। আপনার কলিগদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক করুন। এই বিষয়ে  আরও তথ্যের জন্য CPJ-এর ইন্টারনেট শাটডাউন গাইডলাইন দেখুন।
  • কীভাবে আপনার ডিভাইস এবং কমিউনিকেশন নিরাপদ রাখা যায় সে সম্পর্কে আরও জানার জন্য CPJ-এর ডিজিটাল সেফটি গাইড ফলো করুন।  

CPJ-এর রিসোর্স সেন্টার পেইজটি ভিজিট করলে আপনার সাংবাদিকতার জন্য সহায়ক এরকম এরও অনেক তথ্য পাবেন। যেমন, কোনো অ্যাসাইনমেন্টের আগে কীভাবে প্ল্যান করবেন কিংবা আপনি কোনো অনাকাংখিত ঘটনার মুখোমুখি হলে পরবর্তীতে জরুরী অবস্থায় আপনার কী করণীয় এসম্পর্কিত তথ্য।

নিরাপত্তা সম্পর্কিত আরও তথ্যঃ
নিরাপদে থাকার আরও গাইডলাইন