আপডেট: ২৯ জুলাই, ২০২১
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ার পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং বিপজ্জনক। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মিডিয়াকর্মীদের উচিত তারা যে ঘটনাটি কাভার করছেন তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নিরাপত্তার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া।
সূচিপত্র:
- সাধারণ নিরাপত্তা নির্দেশিকা
- বন্যা
- ঘূর্ণিঝড়/সাইক্লোন/টাইফুন/টর্নেডো
- ভূমিকম্প
- ভূমিধস
- তাপপ্রবাহ
- দাবানল
- আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত
ঝুঁকি কমানোর জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের নিম্নলিখিত নিরাপত্তা-বিষয়ক পরামর্শগুলো বিবেচনা করা উচিত।
সাধারণ নিরাপত্তা-নির্দেশিকা
অ্যাসাইনমেন্ট পরিকল্পনা
- ঘটনাস্থলের ঝুঁকিপূর্ণ অনুষঙ্গগুলো বোঝার চেষ্টা করুন ও সচেতন থাকুন। আগে থেকেই সংঘাতপূর্ণ বা দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিদ্যমান এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা দ্রুত খারাপ হতে পারে
- স্থানীয় পরিস্থিতি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আপনার গতিবিধি এবং ভ্রমনের পরিকল্পনা করুন। সম্ভব হলে, স্থানীয় সাংবাদিক, সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ বা উদ্ধারকর্মী এবং বা স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিন এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন
- ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কোনো জেলখানা বা চিড়িয়াখানা থাকলে তা চিহ্নিত করুন। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন বা বেড়ার কারণে বন্দি অপরাধী বা বন্য প্রাণী পালিয়ে যেতে পারে।
- দুর্ঘটনা-কবলিত এলাকার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে অধিক পরিমাণে নগদ টাকা বহন করার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে, নগদ টাকা ছোট ছোট অংশে ভাগ করে টিম মেম্বারদের মধ্যে বিতরণ করুন। নিজের কাছে কিছু টাকা লুকিয়েও বহন করতে পারেন। কোথায় লুকিয়ে রাখবেন সে বিষয়ে সৃজনশীল হোন।
- নিরাপদে রিপোর্টিং করতে বিশেষ ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (PPE) প্রয়োজন আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন, যেমন লাইফ জ্যাকেট, হেলমেট বা বহন করা যায় এমন অক্সিজেন মাস্কসহ ক্যান/সিলিন্ডার।
- আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে যদি কোনো স্বাস্থ্য এবং ঝুঁকি ইনস্যুরেন্স বা বীমা দেওয়া হয়, তাহলে আপনার সম্ভাব্য রিপোর্টিং-এর জায়গা এবং আনুষঙ্গিক ঝুঁকি সেই বীমার আওতাধীন কিনা তা নিশ্চিত করুন। বিশেষ প্রয়োজনে কোনো ইনজুরির কারণে দ্রুত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের প্রয়োজন হতে পারে। আপনার প্রতিষ্ঠান বা বীমা প্রতিষ্ঠানের সেরকম সক্ষমতা আছে কী না জেনে নিন।
কর্মীদের বিবেচনা
- কর্মীদেরকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্তপোক্ত এবং ক্ষিপ্র হতে হবে যাতে তারা যেকোনো চ্যালেঞ্জিং এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবিলা করতে পারেন।
- নিজেদের সামগ্রিক শারীরিক সমস্যা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের কথা মাথায় রাখুন। ডায়াবেটিস, রক্তচাপের মতো কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রাখুন। ছোটোখাটো আঘাত বা ট্রমার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং সেগুলো ব্যাবহারের উপায় জেনে রাখা ভালো। কেননা অনেক সময় অনেক জায়গায় হাসপাতাল/ক্লিনিকগুলো দুর্যোগকবলিত হতে পারে বা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকতে পারে।
- প্রতিকূল আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাগুলো কভার করার সময় কারোর একা কাজ করা উচিত নয়। যারা এলাকাটির ব্যাপারে সম্যকভাবে জানেন এমন কোনো নির্ভরযোগ্য স্থানীয় সহকারী/ফিক্সার বা গাইডের সঙ্গে কাজ করা বাঞ্ছনীয়।
- দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ, আহতদের ক্ষত ও আর্তনাদ ও মৃত্যুর ঘটনা প্রত্যক্ষ করা গুরুতর মানসিকভাবে বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। সবসময় সেকেন্ডারি ট্রমা বা Post Traumatic Stress Disorder (PTSD)-এর ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিন। মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আরও তথ্যের জন্য CPJ’s psychological safety note দেখুন।
যোগাযোগ
- যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে বা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়তে পারে। বিকল্প যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে একটি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটার জন্য নির্ধারিত সরকারি সংস্থা থেকে অনুমতি নিতে হতে পারে।
- জরুরি পরিষেবা বা নিরাপত্তা-পরামর্শ পেতে স্থানীয় যথাথথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন
- দুর্গম ও দূরবর্তী এলাকা বা যেখানে বিশৃঙ্খলা ও লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটেছে – এমন জায়গা থেকে রিপোর্টিং করলে আপনার অফিস এবং অন্য সহকর্মীদের নিয়মিতভাবে আপডেট জানানোর একটা প্ল্যান বানাতে হবে। তাদেরকে জানিয়ে রাখুন কতক্ষণ পর পর আপনি আপনার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট দেবেন। টানা অনেকক্ষণ আপনার কোনো খোঁজ না পেলে করণীয় কী হবে তা ঠিক করে রাখুন।
- পরিস্থিতির অবনতি হলে প্ল্যান পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। জরুরি অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কয়েকটি অপশন চিহ্নিত করে রাখুন। এবং সেই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পথগুলো রিভিউ করে রাখুন। এই তথ্যগুলো আপনার মূল টিমকে জানিয়ে রাখবেন। আপনার পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন হলে সেটিও তাদেরকে জানিয়ে দিন।
পোশাক ও সরঞ্জামাদি
নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখুন যেন জরুরি ত্রাণ সংস্থা কিংবা উদ্ধারকর্মীদের সাপোর্ট ছাড়াও আপনি টিকে থাকতে পারেন। আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে যেন সঙ্গে নেওয়া সরঞ্জামের ওজন যেন বিপদের কারণ না হয়। সবকিছুর মধ্যে একটা ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে।
নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে পারেন:
- জরুরি সরঞ্জামের কিটব্যাগ: এমন একটা ব্যাগ যেখানে একটি ছোট রেডিও, টর্চলাইট এবং হেড টর্চ (অতিরিক্ত ব্যাটারি সহ), শুকনা ও সহজে প্রস্তুত করা যায় এমন খাবার, ছোট রান্নার সরঞ্জাম, একটি তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, একটি মাল্টি-টুল বক্স এবং ক্যান ওপেনার। এছাড়াও দূর্গত এলাকায় খরচের জন্য পর্যাপ্ত নগদ টাকা সঙ্গে রাখুন।
- ফার্স্ট এইড কিটঃ কাটা এবং ক্ষত পরিষ্কার করার জন্য পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক লিকুইড, টিস্যু, জেল বা ক্রিম মজুত রাখুন। প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যক্তিগত ওষুধ সঙ্গে রাখুন তবে বেআইনি কোনো ওষুধ সঙ্গে রাখবেন না।
- উন্নত মানের ফেস মাস্ক (নূন্যতম N95 গ্রেড বা তার চেয়ে উচ্চ গ্রেড) সঙ্গে রাখতে হবে এবং বিপদজনক সময়ে, বিশেষ করে বিল্ডিং বা ঘর বাড়ির ধ্বংসাবশেষের আশেপাশে থাকাকালীন সময়ে পরে থাকতে হবে। বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ বা পার্টিকেলের ঝুঁকি থাকলে, (যেমন অ্যাসবেস্টস,) শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য বিশেষায়িত ডিভাইস পরিধান করুন।
- নির্দিষ্ট আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত পোশাক (যেমন, গোড়ালির সুরক্ষাসহ মজবুত জুতা) পরিধান করুন।
- ভাঁজ করা যায় এমন পানির পাত্র সঙ্গে রাখুন যেখানে পানি বা জ্বালানি সংরক্ষণ জন্য করা যেতে পারে। তবে জ্বালানি সংরক্ষণের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
- আয়োডিন ট্যাবলেট বা বহনযোগ্য পানি পরিশোধন ব্যবস্থা সঙ্গে রাখুন। পানি খুব জরুরি তাই সম্ভব হলে কিছু পানি মজুত রাখুন । তবে এটি সবসময় সম্ভব নয়। যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ পানির উৎস খুঁজে নিন এবং সর্বদা পানির মজুত নিশ্চিত করুন।
- কয়েক দিনের জন্য অপচনশীল খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করুন । প্রক্রিয়াজাত/ রান্না করা খাবার বহন করা সমস্যাজনক, তবে খাবার পাওয়া কঠিন এমন এলাকায় গেলে আর কোনো উপায় থাকে না।
- পোর্টেবল লাইট এবং জরুরি পাওয়ার সোর্স (উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার ব্যাংক) সঙ্গে রাখুন । সোলার বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম এমন কোনো ডিভাইস সঙ্গে রাখা গেলে অতি উত্তম। যেসব রিপোর্টারদের কাজের প্রয়োজনে অনেকগুলো ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়, তাঁদের সঙ্গে একটা বহনযোগ্য জেনারেটরও রাখতে হতে পারে।
আবাসন
- ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর যত দ্রুত সম্ভব থাকার জায়গার ব্যবস্থা করুন। এবং এটা যেন দুর্যোগ আক্রান্ত এলাকা থেকে যথেষ্ট দূরে অবস্থিত হয়।
- উঁচু ভবন বা বিল্ডিং-এ থাকা থেকে বিরত থাকুন। যেই বিল্ডিং-এ থাকছেন সেটার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কী না সারাক্ষণ নজরে রাখুন।
পরিবহন
- কিছু এলাকা দুর্যোগাক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। যেখানে কেবল হেলিকপ্টার বা ছোট বিমান দিয়ে পৌঁছানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনার অফিস এরকম জরুরি অবস্থায় আপনাকে উদ্ধার করে আনতে সক্ষম কী না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইনস্যুরেন্স বা বীমা কোম্পানি এই ধরনের রেস্কিউ অপারেশনের খরচ বহন করতে পারে। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আগেই সম্যক ধারনা নিয়ে রাখতে হবে।
- উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতির কারণে দ্রুত স্থান পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে, তাই সঙ্গে ভালো পরিবহন ব্যবস্থা রাখুন। ট্যাক্সি/উবার/পাঠাও সার্ভিসের ওপর নির্ভর করবেন না। পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই, এমন যানবাহন ব্যবহার করুন (যেমন উঁচু-নিচু রাস্তায় চলাচলে সক্ষম, মজবুত এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংবলিত যানবাহন )।
- সবসময় আপনার গাড়ি এমনভাবে পার্ক করুন যেন দ্রুত নিরাপদ স্থানে যেতে হলে কোনো বাড়তি সময়ক্ষেপণ না হয়।
অবস্থান ও সচেতনতা
- আক্রান্ত স্থানীয় মানুষেরা বিক্ষুব্ধ হতে পারেন। তাদের সম্পদ, ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিয়ো ধারণের পূর্বে অবশ্যই অনুমতি নিয়ে নিন।
- আক্রান্ত ব্যাক্তিদের সঙ্গে পরবর্তীতে যোগাযোগের জন্য নাম্বার বিনিময় করতে পারেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি একটু ভালো হলে তারা আবার আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তখন ছবি তোলা কিংবা সাক্ষাতকার নেওয়া সহজ হতে পারে।
- জিপিএসের/মোবাইলের ম্যাপ অ্যাপগুলোর উপর নির্ভরতা পরিহার করুন। খুব সতর্কতার সঙ্গে আপনার চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং মাথায় একটা ম্যাপ যত্র করে টুকে রাখুন। মনে রাখবেন, নেভিগেশনের জন্য হয়ত খুব বেশি চিহ্ন নাও থাকতে পারে।
- নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্টের সময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে হালনাগাদ [আপডেট] থাকুন এবং সহজে পরিবর্তন করা যায় এমনভাবে ট্যুর প্ল্যান করুন।
- ইমারজেন্সি রেসপন্স টিমের পরামর্শ মেনে চলুন এবং তাদের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবেন না।
- গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে আগুন জ্বালানো বা ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
বিশেষ বিশেষ দুর্যোগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরামর্শ
বন্যা
মিডিয়া কর্মীদের বন্যার পানি এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে যেখানে পানি খরস্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে বা যেখানে পানির গভীরতা অজানা। গর্ত, ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল, খোলা নর্দমা, খানাখন্দ, বিপজ্জঙ্ক জলজ প্রাণী, অপরিশোধিত নর্দমার পানি এবং পানির নিচে থাকা ভাঙ্গাচোরা বস্তু অসতর্ক অবস্থায় বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
- দেয়াল এবং ভবন ধস হতে পারে পারে এমন স্থাপনা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।
- আকস্মিক ঢেউ (ফ্ল্যাশ ফ্লাড) বা পানির স্রোতের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
- বদ্ধ জলাশয়, যেখানে সংক্রামক রোগ এবং রাসায়নিক বিপদের ঝুঁকি থাকতে পারে এমন এমন স্থান থেকে সতর্ক থাকুন ।
- কখনোই গাড়ি চালিয়ে বন্যার পানির কাছাকাছি বা বন্যার পানিতে যাবেন না এবং দুর্বল ব্রিজ পারাপারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- ল্যান্ড-মাইনের ইতিহাস আছে এমন এলাকার ব্যাপারে হুশিয়ার থাকুন, কেননা বন্যার কারণে ল্যান্ডমাইন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হতে পারে।
- যদি জোয়ার-ভাটার নদী বা উপকূলের কাছাকাছি থাকেন, তাহলে জোয়ার-ভাটার সময়সূচী জেনে নিন। এবং সতর্ক থাকুন।
- মুখ স্পর্শ করার আগে, খাওয়া কিংবা পানি পান করার আগে বা ধূমপান করার আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিন।
- শরীরের ক্ষতস্থান পানির সংস্পর্শে আনবেন না, কারণ এতে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।
- সমস্ত ব্যবহৃত জিনিশপত্র, পোশাক এবং জুতা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
হারিকেন / সাইক্লোন / টাইফুন / টর্নেডো
হারিকেন এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে জানমালের ক্ষতি হতে পারে। বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতি হয়, ভাসমান ধ্বংসাবশেষ তৈরি হতে পারে। যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পরিবহনব্যবস্থা হতে পারে বিঘ্নিত।
- বাতাসের গতি বেড়ে গেলে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান এবং এমতাবস্থায় বাইরে বের হবেন না।
- ঝড়ের সময় বড় কাঁচের জানালা এবং ঢেউটিনের ছাদ, গাছ, বৈদ্যুত্যিক পোল থেকে দূরে থাকুন।
- বিপজ্জনক অবস্থায় গাড়ি চালানোর সময় সতর্ক থাকুন – ঝড়ো বাতাস ও গাড়ির বেগ লম্বভাবে থাকলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে।
- যেকোনো ট্যুর প্ল্যান করার সময় মনে রাখা ভালো যে প্রবল বাতাসে কিছু ব্রিজ, রাস্তা, ও জলপথ বন্ধ থাকতে পারে।
- সম্ভাব্য বন্যার ঝুঁকি মাথায় রাখুন (উপরের বন্যা সংক্রান্ত পরামর্শগুলো দেখুন)।
ভূমিকম্প
- ভূমিকম্পের সময় গাড়ি চালালে ভেঙ্গে বা ধ্বসে পড়তে পারে এমন ভবন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গাড়ি থামান। গাড়িতেই অবস্থান করুন। অনেকেই প্যানিক করে এদিক সেদিক পালানোর চেষ্টা করতে পারে। তাদের থেকে সাবধানে থাকুন।
- ভূ-গহ্বর, ভেঙে-পড়া স্থাপনা, ছেঁড়া বিদ্যুতের তার, বৈদ্যুতিক পোল, বিছিন্ন গ্যাস লাইন, অসমাপ্ত নির্মানকাঠামো, ভাঙা কাচ, বড় কোনও গাছ যা ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে এমন বিপদগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
- উপকূলের কাছে থাকলে সুনামির ঝুঁকির কথা মাথায় রাখুন। সমুদ্রের অস্বাভাবিক কোন পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন।প্রয়োজনে দ্রুত উঁচু কোন স্থানে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা রাখুন।
- ভূমিকম্প পরবর্তী আফটারশকের জন্য প্রস্তুত থাকুন। ভবনে থাকলে, টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন। এমন আসবাবপত্র থেকে দূরে থাকুন যা আপনার শরীরের উপর পড়তে পারে। যখন পরিবেশ নিরাপদ হবে, তখন গ্যাসের লাইন, বৈদ্যুতিক সুইচ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্ধ করুন এবং জ্বলতে থাকা আগুন নিভিয়ে ফেলুন। ম্যাচ জ্বালাবেন না বা লাইটার ব্যবহার করবেন না। পরিস্থিতি নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত বের হবেন না।
- সম্ভাব্য বন্যার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন (উপরের বন্যা বিভাগ দেখুন)।
ভূমিধস/ ল্যান্ডস্লাইড
- নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। কোনো জায়গায় একবার ভূমিধস হলে সেই জায়গার আশেপাশে আবার হতে পারে।
- সেকেন্ডারি ধ্বসের সম্ভাবনা আছে এমন জায়গায় থাকবেন না।
- পরিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখুন। যেমন পাথর পতনের শব্দ, পাহাড়ি ঢাল ভেঙে পড়ার শব্দ বা গাছের ফাটলের আওয়াজ। এগুলো হতে পারে আসন্ন বিপদের সংকেত।
- আপনার কাছাকাছি কোনো জলাধার থাকলে পানির প্রবাহ, পানির লেভেল বা রঙে কোনো পরিবর্তন আসছে কী না খেয়াল রাখুন। এটাও কখনও বিপদের সংকেত হতে পারে।
- ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও অবকাঠামো, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক টাওয়ারগুলো থেকে সতর্ক থাকুন।
- সম্ভাব্য বন্যার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন (উপরের বন্যা বিভাগ দেখুন)।
তীব্র তাপদাহ/ হিটওয়েভ
- যদি সম্ভব হয়, কাজ শুরুর আগে পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য কিছু সময় দিন।
- প্রচণ্ড গরমে সূর্য যখন একদম মাথার ওপরে থাকে তখন গরম সবচেয়ে বেশি হয়। তাই দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাজ এড়িয়ে চলুন। বিরতির জন্য শীতল ছায়াযুক্ত স্থান খুঁজে বের করুন বা ছাউনির ব্যবস্থা করুন। সময় পেলেই ছায়ায় বিশ্রাম নিন।
- মাথায় ক্যাপ দিন। ঢিলেঢালা, হালকা, সুতির পোশাক পরুন।
- প্রচুর পানি পান করুন। পানিশূন্যতার লক্ষণ (যেমন অতিরিক্ত ঘাম, মাথাব্যথা, তৃষ্ণা, বমিঢ় উদ্রেক, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, অজ্ঞান হওয়া, ফ্যাকাশে ত্বক, দ্রুত হার্টবিট, অথবা প্রস্রাব গাঢ় হলে) দেখা দিলে দ্রুত খাবার স্যালাইন বা ORS (Oral Rehydration Salt) পান করুন।
- সহকর্মীরা একে অন্যের স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখুন। তীব্র গরমে যেকারোরই শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে পারে।
- পেশাবের রঙের দিকে নজর রাখুন। সাধারণত পেশাবের রং হাল্কা হলুদ থাকা মানে শরীরে মোটামুটি পানির পরিমাণ ঠিক আছে। যদি পেশাবের রং গাঢ় হতে থাকে তার মানে পানি শূন্যতা হচ্ছে। তখন বেশি বেশি পানি এবং ওরস্যালাইন খেতে হবে।
- অত্যাধিক গরমের কারণে ক্লান্তি( Heat exhaustion) একটি বিপজ্জনক অবস্থা যা জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এমন ক্লান্তির লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান।
- হিটস্ট্রোক জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো: শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, দ্রুত হার্টবিট এবং অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস, কনফিউশন, অজ্ঞান হয়ে পড়া বা খিঁচুনি। দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমান এবং অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নিন।
দাবানল
দাবানলের গতি, শক্তি এবং ধ্বংসাত্মক প্রকৃতি কখনোই ছোট করে দেখবেন না। এমনকি ক্ষুদ্র অগ্নিকাণ্ডও শুষ্ক আবহাওয়া, উচ্চ তাপমাত্রা এবং বাতাসের কারণে দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন, আগুন সাধারণত বায়ু প্রবাহের দিক অনুযায়ী ছড়িয়ে পড়ে, তাই সর্বদা বাতাসের গতিপথ লক্ষ্য রাখুন এবং সেভাবেই নিজের অবস্থান পরিবর্তন করুন।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে CPJ-এর বিশদ নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেখুন।
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত
- শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিকর গ্যাসের (যেমন: কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, রাডন, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড) ঝুঁকির কারণে আগ্নেয়গিরির এলাকায় না যাওয়াই উত্তম।
- আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে দূরে অবস্থান নিন এবং একে ওপরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করুন।
- বাতাসের দিক পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক থাকুন; এটা ক্ষতিকারক গ্যাস এবং ছাই দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে দিতে পারে।
- প্রাকৃতিকভাবে অগ্নি-প্রতিরোধী ফাইবার দিয়ে তৈরি পোশাক পরুন।
- বিপজ্জনক এলাকায় বেশিক্ষণ থাকবেন না। মনে রাখবেন কোনো রকম পুর্বাভাস ছাড়াই এসব এলাকায় কুয়াশা, মেঘ, বৃষ্টি, আগ্নেয়গিরির ধোঁয়ার কারনে আশপাশে দেখতে সমস্যা হতে পারে।
- অগ্ন্যুৎপাতের স্থান থেকে অত্যন্ত দ্রুত বেগে বড় বড় পাথরের টুকরা নিক্ষিপ্ত হতে পারে। এগুলো থেকে সাবধানে থাকুন।
- পরবর্তী অগ্ন্যুৎপাতের সতর্ক সংকেত সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
অ্যাসাইনমেন্টের পূর্ব প্রস্তুতি এবং কোন অনাকাংখিত ঘটনার পরে সহায়তার জন্য কী করবেন, আরও তথ্য এবং টুলসের জন্য CPJ-এর রিসোর্স সেন্টার ভিজিট করুন।